ঢাকা, বুধবার, ৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
পঞ্চগড়ে সাবেক এমপি-মন্ত্রী-ডিসি-এসপিসহ আ’লীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের
ঝালকাঠিতে কারারক্ষী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ-চাকরিপ্রত্যাশীদের বিক্ষোভ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নকলা ইউনিয়ন কমিটি গঠন: সভাপতি নবী হোসেন সাঃ সম্পাদক সাফিত
মিরসরাইয়ে হাঁস নিয়ে ঝগড়ার জেরে বৃদ্ধকে গলাটিপে হত্যার অভিযোগ
ছোট পোশাক তারাই পরবে,যাদের মানায়:সিদ্দিকের প্রাক্তন স্ত্রী মিম
নোয়াখালীতে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করে ভয়ভীতি প্রদর্শন,মামলার এজাহারনামীয় প্রধান আসামী গ্রেফতার
ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী লিটন গ্রেফতার
পুলিশের সাবেক ডিআইজি এ এইচ এম ফিরোজ কবীর মারা গেছেন
নোয়াখালী বিএনপির পুর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি অনুমোদন, নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস
রাজধানীতে উল্টো পথে গাড়ি চলাচল,দেড় শতাধিক মামলা
বাঙ্গালহালিয়া সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা
নালিতাবাড়ীতে পানের বরজ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা, চাষীর মাথায় হাত
আত্রাইয়ে ভটভটি উল্টে নিহত-১
বরের কিডনী নষ্ট শোনে গৃহবধুর বিদায়: ছেলেকে বাচাঁতে মায়ের আকুতি

ঘোড়াঘাটে পানির দরে আলু বিক্রি,পথে বসেছে আলুচাষীরা

মাহতাব উদ্দিন আল মাহমুদঃ,ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
পানির দরে বিক্রি হচ্ছে আলু।উ পাদন খরচও উঠছেনা।পথে বসেছে চাষীরা। হিমাগার ব্যবস্থাপনা ও আধুনিকায়নের অভাবে সংরক্ষণ না করতে পারছেন নাকৃষকরা। ফলে পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে আলু। এবার বীজ ও সারের চড়া দরের কারণে বেডে়ছে উ পাদন খরচ। ভাল দাম না পাওয়ায় মাথায় হাত কৃষকের।পথে বসেছে আলুচাষীরা কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী কৃষিপণ্যে সরকার থেকে মূল্য সহায়তার সুযোগ থাকলেও
বাস্তবে এর বাস্তবায়ন নেই। এতে বেকায়দায় পড়ছেন কৃষকরা। ফলে তাদের ক্ষোভ বাড়ছে। তাদের দাবী, অবিলম্বে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হোক। আলু উৎপাদনে অন্যতম র্শীষ উপজেলা মানুষের যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই দিগন্তজুডে় শুধু ছিল আলুর আবাদ। দেখে মনে হয়েছিল সবুজের গালিচা।;এবার
লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে এই উপজেলার ২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আলুচাষ করা হয়।উ ৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা র্নিধারণ করা হয়েছে প্রায় ৫১ হাজার ৭৫৮ মেট্রিক টন।এই আলুনিয়ে মধ্যসত্ত্বভোগীদের আগ্রাসন ঠেকাতে ১২০ দিনের র্কমসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। হিমাগার ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করার জন্য। কৃষক মোঃ হারুনুর রশীদ জানান, ১০০ টাকা কেজি দরে আলুরোপণ করে এখন পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।হিমাগার খরচও বাড়িয়ে দিয়েছে দ্বিগুন। টাকার অভাবে আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারছে না কৃষক। এই সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণির মজুদদার।র্বতমানে খুচরা বাজারে ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। আর জমিতে ১২ থেকে ১৩ টাকা। কৃষকের অভিযোগ, এ সুযোগে মধ্যসত্ত্বভোগীরা সস্তায় আলুকিনে হিমাগারে রেখে চড়া দরে বিক্রি করবে।গেল মৌসুমে সংরক্ষণ করা আলুর দর ওঠে ৮০-৯০ টাকা র্পযন্ত। কৃষি বিভাগ বলছে, মধ্যসত্ত্বভোগীদের এই আগ্রাসন ঠেকাতে জানুয়ারি থেকে র্মাচ র্পযন্ত ১২০ দিনের র্কমসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষক এনআইডি দিয়ে হিমাগারে আলুসংরক্ষণ করতে পারবে।তবে কোন ব্যবসায়ীকে আলুসংরক্ষণ করতে হলে লাইসেন্স লাগবে সংরক্ষণ দলিল হাত বদলের ব্যাপারে পরির্বতন আনা হচ্ছে ।
জেলা কৃষি বিপণন সুত্র জানায়, ‘জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে র্মাচের ৩১ তারিখ র্পযন্ত এই তিন মাসের মধ্যে আমাদের র্টাগেট হচ্ছে, সব হিমাগারকে একটা ডাটাবেজের আওতায় নিয়ে আসা। ডাটাবেজ বলতে তাদের তথ্যটা যেমন আজকে কতটুকুআলুখালাস
করছে, তার সঠিক তথ্যটা যাতে পাওয়া যায়। সুত্র জানায়, ‘এজন্য আমরা হোয়াটসঅ্যাপে একটা গ্রুপ খুলব। যা প্রতিদিনের তথ্যটা আমাদেরকে দিবে। প্রতিদিন যাওয়া সম্ভব না। তবে তারা যদি প্রতিদিন তথ্যটা দেয় তাহলে সহজ হবে। এটা আমাদের প্রথম উদ্যোগ। হিমাগারের মালিকের যে প্রতিনিধি আসবে তাদেরকে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করে নেয়া এবং তাদের লাইসেন্স নিশ্চিত
করা ।’ কোল্ডস্টোরেজের মালিকদের সহায়তায় কোন কোন ব্যবসায়ী কোল্ডস্টোরেজে ব্যবসা করেন তাদের একটা তালিকা করা। তালিকা করার পর ব্যবসায়ীদেরকে লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসা।’ ,কোনো কোল্ডস্টোরেজের ব্যবসায়ীই কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে কোন লাইসেন্স করেনি। তাদের লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসব। নিশ্চিত করব কোল্ডস্টোরে যে লাইসেন্স ছাড়া যাতে কেউ আলুনা রাখতে পারে।’‘আলুর বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য ◌্অধিদপ্তর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। যার মধ্যে বীজ আলুও খাবার আলুআলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে বলেছি। আলুর বাজারমূল্য ঠিক রাখার জন্য যাতে সরকারিভাবে আলুক্রয় করা যায়, সে বিষয়ে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।’ গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবার আলুচাষের দিকে ঝুঁকেছিলেন চাষিরা। আর বাড়তি চাহিদা তৈরি হওয়ায় সিন্ডিকেটের দখলে ছিল আলুবীজের বাজার। সরকার র্নিধারিত মূল্যের চেয়ে কেজিতে ৫০-৬০ টাকা বেশি দাম দিয়ে কৃষকদের বীজ আলুকিনতে হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। এর
ফলে আলুউ পাদনের ব্যয় প্রতি একর জমিতে বেড়েছে ৪০-৫০ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে তাই লোকসানের মুখে পড়েছেন আলুচাষিরা। ভোক্তা র্পযায়ে আলুর দাম ২০/২৫ টাকা হলেও পাইকারি বাজারে ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি। কৃষকরা বিক্রি করছেন ৭ থেকে ৮ টাকায়। অথচ এবার সব মিলিয়ে উ পাদন
খরচ পড়েছে ২৫ থেকে ২৭ টাকা। তাই র্পযাপ্ত দাম না পেয়ে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন হাজারো কৃষক। আবুতালেব দুই একর জমিতে আলুচাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখন আলুবিক্রি করছি ৮ টাকা কেজি দরে। অথচ আমার আলুতে খরচ হয়েছে কেজি প্রতি ২৫ টাকার মতো। সব মিলিয়ে দুই একরে আমার লোকসান হবে দুই লাখ টাকা। ’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধুআমিই না, আমাদের এলাকার অনেক কৃষক এবার আলুচাষ
করে পথে বসেছে। কৃষক আঃ হামিদ বলেন, ‘আমরা পথে বসে গেছি এবার। বীজ কিনছি ১১০ টাকা কেজি। বিএডিসিতে (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন র্কপোরেশন) দালালে ভরা। কৃষকের কোনো উপকার করে না এই বিএডিসি। বিএডিসিতে তিন দিন গেছি। তারা পাত্তা দেয় না। তারা বলে, বীজ আসে নাই, পাওয়া যায় না। কয়েকদিন পরে বলে, বীজ আর নাই, শেষ! পরে দালালের কাছ থেকে বীজ কিনলাম। তারা ৬০ টাকার আলুনিল ১১০ টাকা। আলুর ন্যায্য দাম না পেলে মাঠে মরা যাব!তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এলাকার কৃষক সুমন ৩ একর, নুরনবী ৪একর ও মাহাবুব ৩ একর জমিতে চাষ করেছে। তারা সবাই লোকসানের ঝুঁকিতে আছে। ’ বুলাকীপুর ইউনিয়নের কৃষক মোঃ হারুনুর রশীদ ৫ একর জমিতে আলুচাষ করেছেন। আলুর বীজের দামের কারণে এবার উ পাদন খরচ অনেক বেড়েছে বলে জানান তিনি।
উ পাদন খরচের সাথে সঙ্গতি রেখে দাম না পেলে লোকসানের কূল কিনারা থাকবে না
উল্লেখ করে বলেন, ‘এবার এক একর জমির বীজ কিনতে হয়েছে ৯০ হাজার টাকায়।
পটাশ, ডিএপি, এমওপি, টিএসপি, ইউরিয়া সার মিলিয়ে ২৫ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। জৈব সার ৪ হাজার টাকা, জমি চাষ বাবদ খরচ ৩ হাজার টাকা। সেচ দিতে খরচ হবে ৫
হাজার টাকা, কীটনাশকে খরচ হবে ১০ হাজার টাকা, শ্রমিকের মজুরিতে খরচ হবে ১৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে একরে মোট খরচের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ’ নাম না প্রকাশ করার র্শতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন র্কপোরেশনের (বিএডিসি) দিনাজপুর বীজ বিপণন র্কাযালয়ে র্কমরত এক কুলি বলেন, ‘বিএডিসির বীজ হিমাগারে চলছে সিন্ডিকেট। ঠিকাদার, বিপণন কেন্দ্রের র্কমর্কতা ও কুলির র্সদার মিলে একটা সিন্ডিকেট করে বাড়তি দামে আলুর বীজ বিক্রি করতো। ’ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ,বলছে এবার আলুতে উ পাদন খরচ বৃদ্ধির মূল কারণ হচ্ছে বীজ আলুর দাম বেশি। এ ছাড়াও এবার কৃষকরা বেশি বেশি আলুর উৎপাদনের দিকে ঝুঁকেছিল, শ্রমব্যয় বেশি ছিল। সব মিলিয়ে উ পাদন খরচটা একটু বেশি হয়েছে। তবে আমরা যদি কৃষকদের গুদামজাতের নিশ্চয়তা দিতে পারি, কৃষকরা যদি ভালোমতো গুদামজাত করতে পারে তবে দাম যখন বেশি হবে তখন বিক্রি করলে কৃষকদের লাভবান হবার সম্ভাবনা আছে।

শেয়ার করুনঃ