
দুষ্প্রাপ্য কয়েন ও ম্যাগনেট পিলার বিক্রির নামে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র।
চক্রটি আমেরিকান এন্টিক দ্রব্যের ব্যবসায়ী, মারোয়ারী সাজিয়ে দেশের উঠতি বড়লোক, অবসরপ্রাপ্ত সচিব, শিল্পপতি ও সাবেক সংসদ সদস্যকে টার্গেট করে প্রতারণা করে আসছিল। সম্প্রতি এক সাবেক সংসদ সদস্যকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিবি রমনা বিভাগ।
গ্রেফতাররা হলেন, মো. মিজানুর রহমান মজনু ( ৪৫), মো. আক্তারুজ্জামান ওরুফে তাহেরুল ইসলাম (৫৮) মো. জসিম (৩৫), ও ইব্রাহিম ব্যাপারি(৩৫)।
এসময় তাদের কাছ থেকে একটি কথিত ব্রিটিশ সীমানা পিলার (ম্যাগনেট পিলার), ৪টি কথিত প্রাচীন কয়েন, নগদ ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ৪টি মোবাইল ফোন, ১টি চুক্তিপত্র, চেক, ভুয়া ভিজিটিং কার্ড এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।
ডিবি জানায়, চক্রটি ঢাকার ভেতরে ঢাকার বাইরে শিল্পপতিদেরকে টার্গেট করে অথবা ভালো চাকরি করে সেখান থেকে রিটায়ার্ড করার পরে এসব মানুষদের টার্গেট করে ব্রিটিশ সীমানা পিলার, কয়েন দেখিয়ে বিশাল লাভের প্রলোভন দিয়ে প্রতারণা করে আসছে। এভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিত।
সোমবার ( ৪ নভেম্বর) রাজধানীর মিন্টুরোডে নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ।
হারুন অর রশীদ বলেন, প্রতারণা করতে গিয়ে চক্রটির চার-পাঁচটি গ্রুপ থাকে। তাদের একটি গ্রুপ আমেরিকাতে বড় ব্যবসী, চাকরিজীবী মারোয়ারী বলে পরিচয় দেয়। আরেকটি গ্রুপ কৃষক সেজে দেখায় আমি আমার গ্রামের পুকুরটা খনন করতে গিয়ে এই এন্টিক জিনিসটা পেয়েছি। ভুক্তভোগী ব্যাক্তিদের রাজধানীর সবচেয়ে দামি হোটেলে বসিয়ে মিটিং করত। মার্কিন ব্যবসায়ী ও মারোয়ারী সেঁজে ভালো ড্রেস পড়ে, দামি গাড়ি ভাড়া নিয়ে আসত। সঙ্গে দুইজন বডি কার্ড থাকি। গলায় তাকে স্বর্ণের হার, হাতে স্বর্ণ। যার সবই ভাড়া করা। এভাবেই মানুষের বিশ্বাস অর্জন করত।
গ্রেফতার তাহেরুল ইসলাম পরিচয় দেয় সে আমেরিকার হেরিটেজ অকশন নামে এক কোম্পানির বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর। তার দামী গাড়ি, স্মার্ট বেশ দেখে ভুক্তভোগীরা তাকে বিশ্বাস করেন। তাহেরুল ইসলাম ভুক্তভোগীকে বলত এন্টিক ২৫০ কোটা টাকায় কিনে আমেরিকা সেটা বিক্রি করবেন ৫০০ কোটি টাকা। দামাদামি করার পর ভুক্তভোগী রাজি। তখন নগদ ৩৫ কোটি টাকার চুক্তি হয়। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও সাবেক সংসদ সদস্যের কাছ থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা নগদ দেয়। বাকি ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা চেকে নেয়। এরপর কথিত ম্যাগনেট পিলার ভুক্তভোগী দেওয়া হয়। সেটি নিয়ে বের হওয়ার সময়ে চক্রের আরেকটি দল পিলারটি ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগীবুঝতে পারেন তিনি প্রতারকদের পাল্লায় পড়েছেন। পরবর্তীতে ডিবি রমনা বিভাগের অভিযোগ দেন। পরবর্তীতে তদন্ত করে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রায়ই সময় মানুষজনদের সতর্ক করি। এসব এন্টিক পিলার দেখিয়ে বড় বড় সরকারি সাবেক কর্মকর্তাদের টার্গেট করে, উঠতি শিল্পপতিদের টার্গেট করে প্রতারকরা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। লোভে পড়ে এমন ফাঁদে পা না দিতে সবাই সতর্ক থাকার অনুরোধ করবো।
ডিবি প্রধান বলেন, ওই যে মারোয়ারী যখন সবাইকে ধরলাম দেখা গেল একজন রিক্সা চালায়, তাহেরুলের দুইজন স্ত্রী আছে, পাশাপাশি চার নারীর সঙ্গে পরোকীয়ায় জড়িত, এই টাকা তাদের পেছনে খরচ করেছে। ভুক্তভোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া নগদ সাড়ে তিন কোটি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। এই টাকা দিয়ে জমি কেনে, এফডিআর করে। প্রতারকরা জানায়, টাকাগুলো নেওয়ার পর তারা দেড় দুই মাস অপেক্ষা করে। এসময়ের মধ্যে পুলিশ তাদের বিষয় খোঁজ খবর না নিলে এইসব টাকা খরচ করে। তাদের কাছ থেকে মাত্র ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতার কথিত আমেরিকার মারোয়ারী তাহেরুল ইসলাম প্রতারণা কাজে একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করে যেটি মাসে ৬০ হাজার টাকা ভাড়া দেয়। যখন হোটেল যায় তখন দিনে লাখ টাকায় একটি দামি গাড়ি ভাড়া নেয়। বডিগার্ড হিসেবে দুই তিনজন লোকে ভাড়া করে।
এভাবে ঢাকা শহরে যারা উঠতি বড় লোক, শিল্পপতি এছাড়াও যারা ধনী আছে, তারা আরও ধনী হতে চায় এই চক্রটি তাদের টার্গেট করে প্রতারণা করে আসছিল।
মহানগর গোয়েন্দা প্রধান বলেন, এমন লোভের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভবনায় বেশী। এর আগেও আমরা তদন্ত করতে গিয়ে দেখেছি এভাবে একজন অবসর প্রাপ্ত সচিবকে প্রথমে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করেছে।
ডিআই/এসকে