
রাজধানীর বেসরকারি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আরও এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির বনানী থানা পুলিশ। তার নাম মো. মাহাথির হাসান (২০)। তিনি মামলার ৩ নম্বর আসামি। এ নিয়ে আলোচিত এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর থানাধীন আজাদ টাওয়ার এলাকার একটি বাসা থেকে হালিশহর থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বনানী থানার বরাত দিয়ে তালেবুর রহমান বলেন, পারভেজ হত্যা মামলার পরপরই ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পর্যালোচনা করে ২১ এপ্রিল রাত আনুমানিক ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে মহাখালী ওয়ারলেস গেট এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) ও আল-আমিন সানি (১৯) নামের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মাহাথিরসহ পারভেজ হত্যা মামলায় এ নিয়ে মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হলো।
এর আগে দুপুরে গাইবান্ধা থেকে মামলার প্রধান আসামি মেহেরাজ ইসলামকে গ্রেফতার করে র্যাব। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কুমিল্লা থেকে এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি হৃদয় মিয়াজিকে (২৩) গ্রেফতার করে র্যাব। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম সদস্যসচিব।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত রবিবার (২০ এপ্রিল) মধ্যরাতে ঢাকার মহাখালী ওয়ারলেস গেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন আসামিকে গ্রেফতার করে বনানী থানা পুলিশ। তবে তারা কেউ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন, মামলার এজাহারেও তাদের নাম নেই। এই তিনজনের সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তারা এখন রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে।
পুলিশ ও মামলার এজাহারের তথ্যমতে, ১৯ এপ্রিল বিকেলে রাজধানীর বনানীতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কের গলিতে সিঙ্গাড়া খাওয়ার জন্য গিয়েছিলেন পারভেজ। ওই সময় সেখানে দুজন ছাত্রী ছিলেন। পারভেজ ওই ছাত্রীদের দেখে ‘হাসাহাসি’ করেন বলে দাবি করে অভিযুক্ত ছাত্রীরা তাদের বন্ধুদের ফোনকল করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উভয়পক্ষকে নিয়ে মীমাংসাও করে দেয়।
কিন্তু মাহাথির, মেহেরাব ও আবুজর গিফারী হাজারীপাড়া এলাকার কিছু ছেলেকে ডেকে নিয়ে আসেন এবং পারভেজের ওপর হামলা চালান। এসময় পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে দৌড়ে আসার সময় আঘাতপ্রাপ্ত হন। তারা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে-পিঠে আঘাত করে পালিয়ে যান।
হামলায় গুরুতর আহত পারভেজকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় পারভেজের চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে আটজনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিদের মধ্যে কয়েকজন প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। অন্যরা বহিরাগত।
মামলার আসামিরা হলেন- মেহরাজ ইসলাম (২০), আবুজর গিফারী পিয়াস (২০), মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজি (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে এজাহারে সোবহান নিয়াজ তুষারের পরিচয় দেওয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে। হৃদয় মিয়াজির পরিচয় দেওয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একই ইউনিটের যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে।
ডিআই/এসকে