
সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার ক্যাশিয়ার ও ভাগ্নে ইব্রাহিম শেখ ওরফে কলম মেম্বারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার দুপুরে ফরিদপুর শহরের আদালতপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কোতোয়ালি থানায় হওয়া একটি মামলায় এজাহারনামীয় আসামি এই ইব্রাহিম শেখ। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নাশকতা, হত্যা চেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক থানায় মামলা রয়েছে। পুলিশ সূত্রগুলো জানিয়েছে, স্থানীয় রাজনীতির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তাঁতীলীগের সদস্য এই ইব্রাহিম শেখ ওরফে কলম।
কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফাহিম ফয়সাল তরফদার বলেন, ‘দুপুর দেড়টার দিকে শহর থেকে ইব্রাহিম শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানায় হওয়া দ্রুত বিচার আইনের একটি মামলায় ২৯ নম্বর আসামি এই ইব্রাহিম ওরফে কলম। সে একজন পেশাদার জুয়াড়ি, মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে আরও মামলা আছে কি-না তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’
যে মামলায় ইব্রাহিম শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই মামলায় রিমান্ড চাওয়া হবে কি-না জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আজই তাকে আদালতে পাঠাবো। একই সঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আদালতে পাঁচদিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক দুর্নীতিবাজ ডিএমপি কমিশনার (বর্তমানে কারান্তরীণ) আছাদুজ্জামান মিয়ার লোকাল ক্যাশিয়ার ছিলেন এই ইব্রাহিম শেখ ওরফে কলম মেম্বার। আছাদুজ্জামান মিয়ার হয়ে এলাকায় আধিপাত্য বিস্তার ও ক্ষমতার অপব্যহার করত সে। অন্যের জমি-দোকান দখল, সালিসের নামে টাকা আদায়, চাঁদাদাজিসহ নানান অভিযোগ রয়েছে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে। তাছাড়া পুলিশে চাকরি, বদলি এসব দেখভাল করতে ইব্রাহিম শেখ। আছাদুজ্জামান মিয়া তাকে ভোট কারচুপির মাধ্যমে জোর জবরদস্তি করে স্থানীয় আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বানিয়েছিলো। তবে অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে তাকে বরখাস্ত হতে হয়েছিল।
সূত্র বলছে, সাবেক দুর্নীতিবাজ ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার হয়ে ইব্রাহিম শেখ ওরফে কলম মেম্বার এলাকায় জমি দখলসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ে ভিন্নমত পোষণকারীদের ওপর দমন পীড়নের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ছিল এই কলম মেম্বার। মূলত আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ সম্পদ দেখভাল করত সে। আছাদুজ্জামান মিয়ার গ্রেফতারের পর তার সম্পদ বাঁচাতে ও হাতবদলে মাঠে ছিল ইব্রাহিম শেখ। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া মৌজায় ইব্রাহিম শেখ কলমের নামে ১৬০ শতাংশ জমি আছে। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা। এই জমির প্রকৃত মালিক সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। এছাড়াও ‘সবুজ ছায়া’ নামে ইব্রাহীম শেখ একটি ঋণদান সংস্থার মালিক। যেখানে কমপক্ষে ১০ কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে তার। কিন্তু দৃশ্যত তার কোনো ব্যবসা নেই। সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ অর্থেই এই সুদের প্রতিষ্ঠানটি (সবুজ ছায়া) পরিচালিত হতো।
এদিকে অনুসন্ধান বলছে, ইব্রাহিম শেখের বিরুদ্ধে ঢাকার খিলগাঁওয়ে একটি মামলা রয়েছে। সেই মামলায় ১৪৪ নম্বর আসামি সে। হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা এই মামলাটি গত ২০ জানুয়ারি হয়। এছাড়াও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় আন্দোলন দমন করতে অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহের গুরুতর অভিযোগ ও রয়েছে ইব্রাহিম শেখ কলমের বিরুদ্ধে।