ঢাকা, রবিবার, ১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ
ঝিকরগাছায় বিএনপির দু ‘গ্রুপের সংঘর্ষ এক কর্মীর মৃত্যু, গ্রেফতার ৬
নড়াইলে মসজিদের ইমামকে মারধরের প্রতিবাদে মানববন্ধন
নওগাঁতে আ’লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ সমাবেশ
পাঁচবিবিতে ছাত্রনেতাকে গুলি করে হত্যা চেষ্টা মামলায় গ্রেফতার-৪
নোয়াখালীতে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি পিন্টুর বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
ডাটাবেইজ বিশ্লেষণ করে ছিনতাই চক্র শনাক্ত করা হচ্ছে: যুগ্ম কমিশনার
নওগাঁয় বিস্ফোরক মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেপ্তার
আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিসহ গ্রেফতার সাত
স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির প্রস্তুতি,অস্ত্র ও ককটেলসহ গ্রেফতার ৭ ডাকাত
থানায় ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সরাসরি ভিডিওকলে কথা বলবেন ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি
থানায় ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সরাসরি ভিডিওকলে কথা বলবেন ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি
নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনের কর্মকাণ্ড করলেই ব্যবস্থা:রেজাউল মল্লিক
আত্রাইয়ের পতিসরে কবিগুরুর কাচারী বাড়িতে শেষ হলো তিন দিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্র উৎসব
ঝালকাঠিতে ‘অপারেশন ডেবিল হান্ট’: আ’লীগের ৪ নেতা গ্রেফতার
রাজাপুরে গ্রাহকের ১২ কোটি টাকা নিয়ে আত্মগোপনে এনজিও মালিকরা: প্রতিবাদে মানববন্ধন

সুন্দরবনে ‘পাতামরা’ রোগের প্রাদূর্ভাব: উজাড়ের শঙ্কায় গোলবন

দক্ষিণ খুলনার কয়রা উপজেলা সংলগ্ন বিশ্ব বিখ্যাত সুন্দরবনের গোলপাতা বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ প্রজাতি। গোলপাতা সুন্দরবনের অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক অর্থকরী সম্পদ। উপকূলীয় এ অঞ্চলের নিম্ন -মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘরবাড়ি ও আশ্রয়স্থল নির্মাণে গোলপাতা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সাম্প্রতিক পাতামরা রোগের প্রাদূর্ভাবে সুন্দরবন থেকে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে গোলপাতা। এতে অভয়ারণ্যসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মণ পাতা পচে যাচ্ছে। এতে গোল গাছের নতুন অঙ্কুরোদগম ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বন সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। তবে গোলপাতার নতুন নতুন কুপও (ক্ষেত্র) বৃদ্ধি পাবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন।

সুন্দরবন ঘুরে দেখা গেছে, যে সব স্থানে গোলপাতার কুপ রয়েছে সে সব স্থানে গোল গাছের পাতা মরে যাচ্ছে। এক জায়গায় অধিক ঘন বন হওয়ার কারণে এসব গাছের পাতার এমন অবস্থা। কোনো কোনো গাছে মাইজ পাতা (মাঝখানের শিশু পাতা) বাদে সব পাতাই নষ্ট হয়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে বন বিভাগের কর্মকর্তা ও বাওয়ালিরা বলছেন, পাতা না কাটার কারণেই এমনটি হচ্ছে। এতে গাছের ফল প্রদানের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। এক সময় এসব কুপ নষ্ট হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন
তারা।সুন্দরবন বনজীবী ব্যবসায়ী ফেডারেশনের সভাপতি মীর কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, এক সময় সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জেই শুধু তিনটি কুপ থেকে গোলপাতা আহরণ করা হতো। বর্তমানে একটি কুপ থেকে গোলপাতা কাটা হয়।

বাকি কুপ গুলোতে গোলপাতার বংশ বিস্তার কমেছে। পাতা মরে যাচ্ছে। গাছ পরিষ্কার না করার কারণে ফল দেয়ার পরিমাণও কমেছে। ফলে এক সময় এসব গাছ মরে যাবে। তখন গাছের অঙ্কুরোদগমও হবে না। উপকূলীয় মানুষের মধ্যে গোলপাতার ব্যবহার কমছে। পাতার জোগান না থাকায় মানুষ টিনের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। অন্য দিকে এক সময় বারো মাসই গোলপাতা আহরণ করা যেত। তখন কিন্তু গোলগাছ বাড়ত। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এসব কুপ নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, বন বিভাগের তদারকি বাড়লে বাওয়ালিরা গোল গাছের শুধুই পাতাই কাটবে না সাথে সাথে গাছ পরিষ্কার করে দেবে। তখন গাছের পাতা উৎপাদনের সক্ষমতাও বাড়বে।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় অফিস সূত্র জানিয়েছে, এ বিভাগের আওতায় এখন মাত্র দু’টি কুপ থেকে চলে গোলপাতা আহরণ। আগে এ বিভাগ থেকে আড়– শিবসা, শিবসা ও ভদ্রা এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জের সাতক্ষীরা কুপ থেকে গোলপাতা আহরণ করা হতো। বর্তমানে তিনটি স্থানই অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে এসব কুপ থেকে আর গোলপাতা আহরণ করা হয় না। যে কারণে গাছ পরিষ্কার না করায় মরা পাতার পরিমাণ বাড়ছে।
সূত্র জানিয়েছে, আগে প্রায় এক হাজার বাওয়ালি গোলপাতা আহরণ করতেন। এখন তা কমে আড়াই শ’তে নেমেছে।

গোলগাছের পাতামরা রোগের বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, ফুল ও ফলের জন্য গোলগাছ পরিষ্কার করা জরুরি। তা না হলে নষ্ট হয়ে যাবে। পাতা না থাকলে গাছের বৃদ্ধি পাওয়ার হারও কমে যাবে। বাওয়ালিদের নির্দেশনাই থাকে যে পাতা কাটার সাথে সাথে গাছ পরিষ্কার করে দিতে হবে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা হয় না। তারা কোনো রকমে পাতা কেটে নিয়ে চলে যায়।

আবার অনেক ক্ষেত্রে তাদের ধারালো দায়ের আঘাতে ও মাইজ পাতা বা ফলের ক্ষতি হয়। সে ক্ষেত্রে ওই গাছ আর ফল উৎপাদন করতে পারে না। এ জন্য উচিত হবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বাওয়ালিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তবেই পাঠাবেন। তাহলে পাতা কাটলে অসুবিধা হবে না।

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এক জায়গায় নষ্ট হলে অন্য জায়গায় বৃদ্ধি পাবে।এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, কিছু গোলপাতা ঝড়ের কারণে বা অন্য কারণে নষ্ট হতে পারে। পাতা কাটলে পাতা বাড়ে এ কথা ঠিক তবে এখন গোলপাতার চাহিদা বাইরে কম। এক সময় ১০ লাখ টন পাতা আহরণ করা হতো। এখন তা কমে দুই লাখ টনে নেমেছে। যে কারণে অনুমতিও কম দেয়া হয়। তিনি বলেন, সুন্দরবনের কোনো গাছ মানুষ লাগায়নি। ফলে এ বনের গাছও নিজস্ব নিয়মেই তার বিস্তার বৃদ্ধি করবে।

শেয়ার করুনঃ