সিলেট জেলা প্রতিনিধি:
বন্দুকের মুখে খনিজ বালি লুট ঠেকাতে সীমান্ত নদী জাদুকাটার চরে নেমে আসলেন শত শত প্রতিবাদী মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের খনিজ বালি পাথরসমৃদ্ধ জাদুকাটা নদীর পূর্ব তীরে এ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন, জাদুকাটা নদীর পূর্ব তীরে লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্পের সামনে শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠা চর খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করেন লাউড়গড় চার (পাড়া) মহল্লাবাসী, সাহিদাবাদ, ঢালারপাড়, ছড়ারপাড়, মুকসেদপুর, পুরান লাউড়গড়সহ কয়েক গ্রামের মানুষ।
বক্তাদের দাবি- লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্পের সামনের এ চর বর্ষায় তলিয়ে যায়। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বছরের কয়েক মাস শুষ্ক মৌসুমে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এলাকার একমাত্র জেগে ওঠা এ চর থেকে বালি লুট করা হলে লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্প, বাজার, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লাউড়গড় গ্রাম, লাউরগড় থেকে সাহিদাবাদ গ্রাম, সীমান্তমুখী সড়ক আবার পাহাড়ি ঢলে ভাঙনের মুখে পড়বে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, এই চর থেকে জাদুকাটা বালি মহালের ইজারাদারদের হয়ে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আফতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক তাহিরপুরের জাঙ্গালহাটির বোরহান উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোদেরগাঁও গ্রামের রায়হান উদ্দিন রিপনের সহোদর গোলাম রব্বানী ওরফে রব্বানী, পুরান লাউর গ্রামের শুক্কুর মাহমুদের ছেলে, উপজেলার জাদুকাটা বোল্ডার পাথর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব ওরফে পাথ্থর মোতালেবের ভাতিজী জামাই শিপন, তার দুই সহোদর সোহেল, সুমন, উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি পুরান লাউড় গ্রামের রহমান, ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য একই গ্রামের আলাল, আহমদের ছেলে মিজানুরসহ একাধিক অস্ত্রধারী লোক স্পিডবোট, ট্রলারযোগে বন্দুক ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্পের সামনে চরে খনিজ বালি লুটে নিতে শতাধিক ট্রলার ভেড়ায়।
খবর পেয়ে উপজেলার লাউড়গড়বাসী মাইকে ঘোষণা দিয়ে বালি লুট ঠেকানোর আহ্বান জানালে শত শত নারী-পুরুষ চরে অবস্থান নেন। বালি লুটে আসা অস্ত্রধারীরা অবস্থা বেগতিক দেখে পিছু হটে। লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা তাৎক্ষণিক সংঘাত ঠেকাতে চরে এসে আইনশৃস্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
মানববন্ধন পূর্ববর্তী প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাইয়ুম, জামায়তে ইসলামীর ওয়ার্ড সভাপতি রমজান আলী, মাওলানা নওশাদ আহমদ, মোতাওয়াল্লি আব্দুল কাইয়ুম, মজিবুর রহমানসহ এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বৃহস্পতিবার উপজেলার জাদুকাটা বোল্ডার পাথর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব বলেন, শিপন আমার ভাতিজী জামাই হলেও বৃহস্পতিবার বিজিবি ক্যাম্পের সামনে বালি চরের ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।
সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক তাহিরপুরের জাঙ্গালহাটির বোরহান উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ঝগড়া থামাতে ওই চরে গিয়েছিলাম।
তাহিরপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন বলেন, আমি মূলত লাউড়গড়বাসীর সঙ্গে বালি উত্তোলনকারীদের ঝামেলা মীমাংসা করতে ওই চরে গিয়েছিলাম। এরপর উত্তেজিত লোকজন আমার নাম ধরে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিলে আমি চর থেকে ফিরে আসি।
জাদুকাটা বালি মহাল-১ এর ইজারাদার নাসির মিয়া জানান, ইজারাদারদের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার বিজিবি ক্যাম্পের চরে বালি উত্তোলনে কাউকে পাঠানো হয়নি। যারা ওই চরে বালি উত্তোলনে গিয়েছিল, সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।