মো. সফর মিয়া, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে লাউর ফতেহপুর বাশারুক বাজার থেকে বিটঘর পর্যন্ত ৩.৯ কিলোমিটার সড়ক ও সেতু নির্মাণ প্রকল্পে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের শুরু থেকেই নিম্নমানের ইট, অপর্যাপ্ত বালু ও কোথাও কোথাও ইটের বদলে মাটি ব্যবহারের ফলে নির্মাণাধীন সড়কের মান নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৮ ফুট প্রস্থের এই পিচঢালা সড়কে চারটি সেতু নির্মাণের কথা থাকলেও, সড়কের বিভিন্ন অংশে ব্যবহৃত হচ্ছে দুই নম্বর ইট এবং বালুর পরিমাণও চাহিদার তুলনায় অনেক কম। কিছু স্থানে ইটের পরিবর্তে সাধারণ মাটি দিয়ে ভরাট করার ফলে পাকা হওয়ার আগেই সড়কের কিছু অংশ বসে যেতে শুরু করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কটির উন্নয়নের অপেক্ষায় থাকা স্থানীয়রা কাজের বর্তমান দুরবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। লাউর ফতেহপুর এলাকার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন বলেন, “ঠিকাদার যে ইট ব্যবহার করছে, তার সবই দুই নম্বর। অনেক জায়গায় তো ইটের বদলে মাটিই দেওয়া হয়েছে। এই কাজের তদন্ত হলে সব বেরিয়ে আসবে। আমরা সরকারি তদন্তের দাবি জানাই।”
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, “বহু বছর ধরে রাস্তাটি ব্যবহারের অযোগ্য ছিল। এখন কাজ শুরু হলেও মানের কোনো বালাই নেই। নিম্নমানের ইট ব্যবহারের ফলে রাস্তাটি বেশিদিন টিকবে বলেও মনে হয় না।” পথচারী শামীম মিয়াও একই অভিযোগ করে বলেন, “তিন বছর রাস্তাটি ফেলে রাখার পর দলীয় প্রভাবে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো কাজের গুণগত মান তদারকির কোনো ব্যবস্থা নেই।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহআলম বলেন, “আমরা একটি ভালো রাস্তার স্বপ্ন দেখেছিলাম, যা আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে সাহায্য করবে। কিন্তু যা হচ্ছে, তা দেখে মনে হচ্ছে এটি কেবল দুর্নীতিরই উদাহরণ।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ‘ইউনুসেন ব্রাদার্স’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই কাজটি হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের মূল লক্ষ্য কাজের মান নিশ্চিত করা নয়, বরং দ্রুত কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক জানান, “আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয় বালু বেশি ব্যবহার করতে এবং ইট কম দিতে। অনেক জায়গায় মাটি দিয়েই ভরাট করতে হয়। আর যারা তদারকি করতে আসেন, তাদের আগেই ম্যানেজ করে রাখা হয়।”
তবে, লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম স্বীকার করেন যে, “প্রথম দিকে কাজের মান খুবই খারাপ ছিল। আমরা চাপ না দিলে ঠিকাদার যেমন খুশি তেমনভাবে কাজ শেষ করে দিত। এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে, কিন্তু তা এখনো সন্তোষজনক নয়।”
এ ব্যাপারে ‘ইউনুসেন ব্রাদার্স’-এর সাইট ম্যানেজার মো. শাহাদাত হোসেন সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ীই কাজ চলছে। যারা অভিযোগ করছেন, তারা হয়তো প্রকল্পের অগ্রগতি সঠিকভাবে বুঝতে পারছেন না।”অন্যদিকে, নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব চৌধুরী জানিয়েছেন, “বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। প্রয়োজনে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা প্রশাসককে অবগত করা হবে। আমরা চাই গুণগত মান বজায় রেখে কাজ শেষ হোক, যাতে জনগণের কোনো ভোগান্তি না হয়।”