
ডেস্ক রিপোর্ট: দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে অর্থোপেডিক্স সার্জারি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে গতকাল সোমবার বিশ্বজুড়ে হাড়ের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। তার মধ্যে ছিল বর্ণাঢ্য র্যালি ও সাইন্টিফিক সেমিনার।"

দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের উদ্যোগে দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে সকাল ১০ টায় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালিটি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের বাইরে প্রদর্শন শেষে কলেজ ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। র্যালিতে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তার, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী সহ দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, কর্মচারী,নার্স সহ অনেকে অংশগ্রহণ করে। এর আগে র্যালিটির উদ্বোধন করেন দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ সেখ সাদেক আলী। র্যালি শেষে মেডিকেল কলেজের কনফারেন্স রুমে আয়োজন করা হয় সাইন্টিফিক সেমিনারের।

দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল :‘ইট’স আনএক্সসেপ্টেবল! অর্থাৎ এটা অগ্রহণযোগ্য, অস্টিওপরোসিসে আক্রান্ত লাখো মানুষের চিকিৎসা ও সচেতনতার ঘাটতি আর কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডাক্তার মুহাম্মদ খুরশিদ আলমের সভাপতিত্বে, জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের ডাক্তার উদয় কুমার সরকার সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সহকারী প্রফেসর অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের ডাক্তার মোঃ আবু বাকের সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার মো: ফজলুর রহমান। ডাক্তার মো: আব্দুল কাদের মহোদয়ের সমাপনী বক্তব্য ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, হাড়ের সুরক্ষায় মানুষকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। করতে হবে নিয়মিত ব্যায়াম। তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে ভারী ব্যয়াম করা উচিত নয়। বিছানা থেকে উঠানামার সময় এবং বাথরুমে পড়ে গিয়ে হাড়ের ফ্রাকচার যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাথরুম যাতে ভেজা না থাকে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে হবে। ভিটামিন ডির পাশাপাশি ম্যাগনিসিয়াম খাওয়ারও প্রয়োজন রয়েছে। তিনি তাঁর বক্তব্যে গবেষণার প্রতি আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য শিক্ষক, চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, ছাত্র, হাসপাতালের নার্স, ইন্টার্নি ডাক্তার সহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারে উপস্থিত অনেকেই তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা আরো বলেন, দেশে পঞ্চাশোর্ধ্ব তিনজন নারীর মধ্যে একজন হাড়ের ক্ষয়জনিত রোগে বা অস্টিওপোরোসিসে ভুগছেন। আর এ বয়সের পুরুষদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন ভুগছেন। অস্টিওপোরোসিস একটি নীরব রোগ হলেও এটি সময়মতো শনাক্ত এবং প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনধারা পরিবর্তন করে এই রোগের ঝুঁকি কমানো যায়। অস্টিওপোরোসিস দিবসের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়িয়ে হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং সুস্থ জীবনের জন্য এগিয়ে আসা জরুরি। এছাড়া ভিটামিন ‘ডি’ ও ক্যালসিয়ামের অভাব হলে অস্টিওপোরোসিস দেখা দিতে পারে। তাই এ রোগের বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।বক্তারা আরো বলেন, মূলত এ রোগের প্রধান কারণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডির অভাব। ভিটামিন ‘ডি’ ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার না খাওয়া, দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ওষুধ সেবন, নারীদের মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধের পর, ধূমপান, দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার কম খাওয়া, দীর্ঘ সময় বসে থাকা, রোদ এড়িয়ে চলা, অতিরিক্ত কফি ও মদ্যপান এই রোগের প্রধান কারণ। এ রোগ থেকে বাঁচতে সবারই জীবনযাত্রায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। প্রতিদিন ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, সুষম ও আঁশযুক্তযুক্ত খাবার খেতে হবে। নিয়মিত শরীরে রোদ লাগাতে হবে। কায়িক পরিশ্রম ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করতে হবে। দুধ, ছানা, দই, ডিম, ডাল, সয়াবিন, পালংশাক, সরিষাশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকলি, খেজুর, বাদাম, সামুদ্রিক মাছ ও মাংসজাতীয় খাবার খেলে এই রোগের ঝুঁকি কমে। পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রতিটি নারী–পুরুষকে দিনে ১ হাজার ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। ননি তোলা দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্য, সবুজ শাকসবজিসমৃদ্ধ খাদ্য খেতে হবে।
অনুষ্ঠানটির সাইন্টিফিক পার্টনার দি একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা অ্যাসিস্ট্যান্ট সেলস ম্যানেজার রাশেদুল ইসলাম সেমিনারে উপস্থিত থেকে তার মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, দেশের প্রায় ৬০ লাখ মানুষ অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগে ভুগছেন। বয়স্ক যারা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের প্রতি ১০ জনের ৯ জনই নারী। চিকিৎসকদের ধারণা আগামী পাঁচ বছরে অসংক্রামক ব্যাধি হিসাবে শীর্ষ পাঁচে এই হাড়ক্ষয় রোগ উঠে আসবে। কিন্তু হাড়ক্ষয় রোগে আক্রান্তদের অনেকেই এ সম্পর্কে জানেন না। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না হলে মৃত্যুও ঘটতে পারে এ রোগে। এ তথ্য বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির।প্রতি বছর ২০ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস। দিনটি উদযাপন করে ইন্টারন্যাশনাল অস্টিওপরোসিস ফাউন্ডেশন, যার লক্ষ্য সারা বিশ্বে হাড়ের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব তুলে ধরা, রোগ প্রতিরোধ ও সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করা।