গাজীপুর শ্রীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের একটি রিসোর্টে এক মডেল-অভিনেত্রী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তার বর্ণনার ভিত্তিতে মামলা রুজু হলেও পুলিশের ভাষ্য: ভুক্তভোগীর বক্তব্যে বারবার গড়মিল ধরা পড়েছে। ঘটনাটির নেপথ্যে উঠে আসছে ‘আইফোন প্রসঙ্গ’।
শনিবার দুপুরে গাজীপুর শ্রীপুর উপজেলার রাস রিসোর্টে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে অভিযান চালিয়ে ২ নারী ও রিসোর্টের স্টাফসহ মোট ১৮ জনকে আটক করে শ্রীপুর থানা পুলিশ। ধর্ষণ মামলার আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে নাট্যনির্মাতা নাসির উদ্দিন, বাবর ও আরেক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে।
অভিযোগে ওই নারী জানান, ঢাকার বাসা থেকে পরিচালক নাসির উদ্দিনের সঙ্গে গাড়িতে করে রাত সাড়ে তিনটার দিকে তিনি শ্রীপুরের রাস রিসোর্টে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে কয়েকজনকে মদ পান করতে দেখেন। এরপর রুমে গিয়ে কাপড় পরিবর্তন করার পর পরিচালক নাসির, বাবর ও অচেনা এক ব্যক্তি তাকে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘একজন একজন করে তিনজন রুমে ঢুকে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেন। পরদিন সকালে গাড়িতে করে আমাকে ঢাকায় পৌঁছে দেয়া হয়। এরপর আমি বাসায় দুইদিন চিকিৎসা করে মিরপুর থানায় গেলে শ্রীপুর থানায় এসে মামলা করার পরামর্শ দেন। এরপর আমি থানায় এসে ঘটনা জানালে মামলা হয়। আমি আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি’।
পরবর্তীতে ভিন্ন এক বক্তব্যে তিনি জানান, “আমার সঙ্গে যা করেছে, তাতে কষ্ট নেই। বেশি কষ্ট হয়েছে আমার আইফোন নিয়ে গেছে বলে।”
এমনকি দুইজন গণমাধ্যমকর্মীকে তিনি আলাদাভাবে বলেছেন, একজন ৬০ বছরের বৃদ্ধ ও পৃথক বক্তব্যে ৭০ বছরের বৃদ্ধ তাকে ধর্ষণ করেছেন।
শ্রীপুর থানা পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) জানান, গত বৃহস্পতিবার ভোররাতে থানায় এসে ওই নারী প্রথমেই আইফোন হারানোর অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “মূলত তিনি গণধর্ষণের ঘটনার চেয়ে আইফোন নিয়েই তিনি বেশি বলেছেন।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভুক্তভোগীর বক্তব্যের পর স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, রাত ৩টার দিকে তিনি কেন ঢাকা থেকে গাজীপুরের রিসোর্টে গেলেন ? তাঁদের মতে, আসল ঘটনা ‘লেনদেনের বনিবনা না হওয়া’। কেউ কেউ বলছেন, আইফোন যদি সত্যিই নিয়ে থাকে, তবে কাগজপত্র দেখে সেটি উদ্ধার করা হোক। আবার কাগজপত্র না থাকলে ঘটনাটির অন্তরালে কী আছে, তা খুঁজে বের করা জরুরি। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তিন ধরনের বক্তব্য দেওয়ায় পুরো বিষয়টি এখন স্থানীয়ভাবে হাস্যরসেরও জন্ম দিয়েছে।
শ্রীপুর থানার ওসি আব্দুল বারিক বলেন, আজকে এসিল্যান্ড স্যারের নেতৃত্বে অনৈতিক কাজে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দুইজন নারী ও রিসোর্টের স্টাফসহ মোট ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী কোনো নারী অভিযোগ করলেই পুলিশ মামলা নেয় এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায়। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণ সাপেক্ষে আদালতে বিচার হবে। তিনি আরও জানান, মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।