
নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লিয়াজোঁ অফিসার পরিচয়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক মোতাল্লেছ হোসেনের ৫ কোটি টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করেছে সিআইডি।
সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজধানীর মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত এই বাজেয়াপ্তের আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত প্রতারক মোতাল্লেছ হোসেনের বিদেশ গমনেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।
পল্লবী থানায় দায়ের করা মানিলন্ডারিং মামলার (মামলা নং–১৯, তারিখ ০৭/০৯/২০২৫) অগ্রগতির অংশ হিসেবে এই অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হয়। মামলাটি দায়ের করা হয় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২)/৪(৪) ধারায়।
সিআইডির তদন্তে জানা গেছে, মোতাল্লেছ হোসেন নিজেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার লিয়াজোঁ অফিসার পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, মোতাল্লেছের নামে থাকা ‘এম এল ট্রেডিং’ নামক প্রতিষ্ঠানটি আসলে অস্তিত্বহীন। যদিও প্রতিষ্ঠানটির নামে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ছিল, বাস্তবে কোনো ব্যবসায়িক কার্যক্রম পাওয়া যায়নি। তিনি কখনও গার্মেন্টস মালিক, কখনও চা-বাগানের উদ্যোক্তা বা ঠিকাদারি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতেন। তার নামে খোলা ব্যাংক হিসাবগুলোর মাধ্যমে প্রায় ২০ কোটি টাকার লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা বলে বিএনপির দলীয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা নিজের ব্যাংক হিসাবে সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করেন বলে তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে।
সিআইডির আবেদনের ভিত্তিতে আদালত পারমিশন পিটিশন নং ৭৫৮/২০২৫, আদেশ নং ০২, তারিখ ০৯/১০/২০২৫ খ্রিস্টাব্দে মোতাল্লেছের আটটি ব্যাংক হিসাবের স্থিতি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন।
এই হিসাবগুলো হলো—আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক পিএলসিতে ১টি, সিটি ব্যাংক পিএলসিতে ২টি, প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসিতে ২টি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসিতে ২টি এবং সোনালী ব্যাংক পিএলসিতে ১টি।
সবমিলিয়ে এই ব্যাংক হিসাবগুলোতে থাকা প্রায় ৫ কোটি টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মোতাল্লেছ হোসেন ছাড়াও আরও ২/৩ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়েছে। প্রতারণা চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতার সিআইডির তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।