

নিজস্ব প্রতিবেদক,সকালের খবর
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে মাকসুদুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে সাবেক যুবদল নেতা আকবর হোসেন নিপু খিলজিসহ তার ঘনিষ্ঠরা। মেরে ফেলা ও গুম করার হুমকি পেয়ে আহতকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগীর পরিবার।
গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে উপজেলার আফাজিয়া হাইস্কুল মাঠ সংলগ্ন আলাউদ্দিনের বাগানে এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী মাকসুদুর রহমান (৩০) হাতিয়া উপজেলার চরইশ্বর ইউনিয়নের ০২ ওয়ার্ড বেলায়েত হোসেনের ছেলে। তিনি মঙ্গলবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হামলাকারীদের হুমকি পেলে ভুক্তভোগী পরিবার তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। বর্তমানে তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান আহতের ভাই রকি।
অভিযুক্ত আকবর হোসেন নিপু খিলজি (৪৫) উপজেলার আফাজিয়া এলাকার মৃত আলাউদ্দিন খিলজির ছেলে। তিনি উপজেলা যুবদলের সাবেক নেতা এবং নলচিরা ঘাটে ইজারাদারের ব্রোকার হয়ে কাজ করেন বলে জানা যায়। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে ঘাটে তেল চোরাকারবার ও চাঁদাবাজিসহ নানান অপরাধে বিভিন্ন প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।
ভুক্তভোগী মাকসুদুর রহমান জানান,তিনি আফাজিয়া বাজারে ছোট্ট একটি দোকান করতেন। আকবর হোসেন নিপু খিলজি ও নাদিম উদ্দিন অপু খিলজি দুই ভাই প্রায় তার থেকে বিনা কারণে চাঁদা দাবি করতেন। চাঁদা না দেওয়ায় তারা দুই ধাপে মাকসুদের দোকান বন্ধ করে দেয়। পরে স্থানীয় অন্যান্য ব্যবসায়ীর অনুরোধে তারা দোকান খুলে দেয়। মঙ্গলবার রাতেও পূর্বকার ক্ষোভের জের ধরে নিপু খিলজির নেতৃত্বে তার ছেলে ও তার ভাই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা অপু খিলজিসহ তাদের ঘনিষ্ঠ সাঙ্গপাঙ্গরা মাকসুদকে তার দোকান থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং আফাজিয়া হাইস্কুল মাঠ সংলগ্ন জনৈক আলাউদ্দিনের বাগানে নিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে হামলাকারীরা তাকে মৃত ভেবে বাগানে রেখে চলে যায়।
স্থানীয়রা জানায়,ভুক্তভোগীর পিতা বেলায়েত হোসেন একসময় স’মিলে মিস্ত্রি কাজ করতেন। এক দুর্ঘটনায় তিনি মারাত্মক আহত হন এবং এক হাত কেটে যায়। পরে আফাজিয়া বাজার ইজারাদারের কর্মী হয়ে কাজ করতেন। হামলাকারীরা এই বেলায়েত হোসেন ওরপে বেলায়েত মিস্ত্রিকে তার কাজ থেকেও বিতাড়িত করেন।
ভুক্তভোগী মাকসুদুর রহমানের ভাই রকি জানান, হামলাকারীরা কেন্দ্রীয় মহিলা দল নেত্রী ফৌজিয়া খিলজির ভাই-ভাতিজা। এছাড়া, নলচিরা নৌঘাটের যত অনিয়ম-কর্মকান্ড সব ফৌজিয়া খিলজি ও তার ভাই-ভাতিজা এবং তাদের ঘনিষ্ঠ সাঙ্গপাঙ্গদের দ্বারা সংগঠিত হয়।
হামলার শিকার মাকসুদুর রহমানের পিতা বেলায়েত হোসেন জানান, প্রায় সময় তার ছেলে মাকসুদ থেকে হামলাকারীরা বিনা কারণে টাকা চাইতেন। টাকা না দিলে দোকান বন্ধ করে দিতেন। শুধু তাই নয়, বাজারে ইজারাদারের লোক হয়ে কাজ করায় তার থেকে চাঁদা দাবি করে নিপু।
তিনি জানান, ঘটনার পর আশপাশের মানুষ এসে তার ছেলে মাকসুদকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় হামলাকারীরা তার ছেলেকে মেরে ফেলাসহ গুম করার হুমকি দেয়। পরে বিনা চিকিৎসায় তার ছেলেকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যান। এখন টাকার অভাবে তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরেও নিতে পারছে না। এদিকে, হামলাকারীরা গত দুইদিন কয়েকবার ভুক্তভোগীর বাড়ির সামনে মহড়া দেয় বলেও জানান এই বাবা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সাবেক যুবদল নেতা আকবর হোসেন নিপু খিলজির মুঠোফোনে কল করলে তিনি জানান, মাকসুদুর রহমান একজন মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পূর্বে তার মাদক ও চোরাকারবারির ব্যবসায়ী বাঁধা দিলে সে আমার (আকবর হোসেন নিপু খিলজি) ওপর কয়েক বার হামলা করে। এতে আমি কোন প্রতিকার পাইনি। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর মাকসুদ আফাজিয়া বাজারে বিদ্যালেয়ের কর্ণারে মাদক বিক্রি করার সময় তাকে বাঁধা দিলে সে আমার ওপর হামলা করে। এসময় আত্মরক্ষার্থে আমিও তাকে মারধর করি। এখানে হত্যা চেষ্টার কোন ঘটনা ঘটেনি।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজমল হুদা জানান, এই ঘটনায় এখানো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।