

রবিউল হোসাইন সবুজ, লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় ব্রিটিশ আমল ও সুবর্ণালয়ের সময়কার ইতিহাসে জড়িয়ে আছে এক প্রভাবশালী নাম — জমিদার অতুল কৃষ্ণ রায় চৌধুরী।স্থানীয়ভাবে “মৈশান বাড়ি” নামে পরিচিত তার জমিদার বাড়িটি আজও লাকসামের ঐতিহ্য বহন করছে। শুধু স্থাপত্য নয়, শিক্ষা, সমাজসেবা ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমে তার অবদান লাকসামের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে আছে।
জমিদার অতুল কৃষ্ণ রায় চৌধুরীর ঐতিহাসিক বাড়িটি লাকসাম উপজেলার হৃদয়ে অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে এটি “মৈশান বাড়ি” নামে সুপরিচিত।ইতিহাসবিদদের মতে, এ বাড়িটি শুধু জমিদারি কেন্দ্র ছিল না — বরং এটি ছিল শিক্ষাবিস্তার ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, ১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত লাকসাম সরকারি পাইলট হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জমিদার অতুল কৃষ্ণ রায় চৌধুরী। তিনি শিক্ষার প্রসারে নিজের সম্পত্তি ও অর্থ দান করেন এবং এলাকাবাসীর কল্যাণে বিদ্যালয়ের জমি দান করেন।
সম্পত্তির ইতিহাস অধ্যয়নে দেখা যায়, ১৯২ নং লাকসাম মৌজায় ৭৯ নং সিএস খতিয়ানে তিন দাগের মধ্যে তার সম্পত্তি নিবন্ধিত ছিল।খতিয়ান অনুযায়ী, তিনি বাজার এলাকার প্রায় ২৩ শতাংশ ভূমির মালিক ছিলেন।পরবর্তীতে সরকারি নীতির আওতায় “অ্যাকোয়ার্ড” বা অধিগ্রহণের মাধ্যমে ২৪৯ নং দাগের ০৬ শতাংশ ভূমি সরকারের নামে নথিভুক্ত হয়।
স্থানীয় বাজারের একটি বড় অংশ, যা বর্তমানে “দৈনিক বাজার” নামে পরিচিত, তার জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।তবে বর্তমানে ঐ বাজারের অবকাঠামো পুরাতন ও অব্যবহৃত হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে ঐতিহাসিক “মৈশান বাড়ি”র অবস্থা বেশ নাজুক। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এর অনেক অংশ ভেঙে পড়েছে এবং প্রাচীন সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।
এ বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, ফলে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি আজ বিলুপ্তির পথে।
ঐতিহ্য রক্ষায় লাকসামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক এই মৈশান বাড়ি সংরক্ষণে স্থানীয় ইতিহাসপ্রেমী ও নাগরিক সমাজ প্রশাসনের ত্বরিত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।তাদের মতে, এ বাড়িটিকে সংস্কার ও সংরক্ষণ করে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করা গেলে লাকসামের সাংস্কৃতিক পরিচয় আরও সমৃদ্ধ হবে।