

স্টাফ রিপোর্টারঃ সীমান্তবর্তী জেলা যশোরে এইচআইভি (HIV) সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই সমকামী।যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এইচআইভিতে সংক্রমিত ও আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ জন। যেখানে ২০২৪ সালে মোট ২৫ জন শনাক্ত হয়েছিলেন। অর্থাৎ, মাত্র ১০ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।উদ্বেগের প্রধান কারণ হলো তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংক্রমণের উচ্চ হার।মোট শিক্ষার্থী আক্রান্ত: ২৫ জন।শিক্ষার্থীদের বয়সসীমা: ১৭ থেকে ২৩ বছর।বৃদ্ধির হার: ২০২৪ সালে মোট আক্রান্তের মধ্যে শিক্ষার্থী ছিল ১২ জন। কিন্তু এই বছর মাত্র ১০ মাসে সেই সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি ছাড়িয়ে ২৫ জনে পৌঁছেছে।সমকামিতাকেই মূল কারণ বলছেন চিকিৎসকরা।নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ২৩ জনই সমকামী।চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিপুল সংখ্যক সমকামী আক্রান্ত হওয়ায় পরিস্থিতি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।হাসপাতালের এআরটি (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি) সেন্টারের ডা. কানিজ ফাতেমা বলেন, “তরুণ শিক্ষার্থিদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার বর্তমানে উদ্বেগজনকভাবে হারে বাড়ছে। তাদের চাহিদা এখন বিপরীত লিঙ্গের চেয়ে সমলিঙ্গের প্রতি বেশি দেখা যাচ্ছে, যা এক ধরনের সামাজিক চক্রান্তের ফল। ডিজিটাল-ইন্টারনেট এবং স্মার্ট মোবাইলের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের প্রভাবেই এধরনের প্রবণতা বাড়ছে।”
বর্তমানে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের এআরটি সেন্টারে এইচআইভি ও এইডস আক্রান্ত ২২০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এসব রোগীর মধ্যে শুধু যশোর নয়, খুলনা বিভাগের অন্যান্য জেলার মানুষও রয়েছে। ২০২৪ সালে যশোরে মোট আক্রান্তের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অপসংস্কৃতি, মাদক সেবন ও পাচার এবং অনিরাপদ যৌন আচরণের কারণেই এইচআইভি সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি ভবিষ্যতের জন্য এক বড় হুমকি।অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলছেন,ডিজিটাল-ইন্টারনেট ও স্মার্ট মোবাইলের ব্যবহার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামীতে এ সংক্রমণের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এই ভয়াবহ বিস্তার রোধ করতে একমাত্র সামাজিক সচেতনতাই পারে এই সংক্রমণের সংখ্যা কমিয়ে আনতে।এই পরিস্থিতিতে, স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিরোধমূলক সেবা, সহজলভ্য চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এছাড়াও জনসচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং এনজিওসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো একসঙ্গে কাজ করছে।