

আব্দুল্লাহ আল মামুন, পাবনা প্রতিনিধিঃ পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের পুরাতন ভাদুরডাঙ্গী গ্রামে ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। নামাজরত অবস্থায় ৬০ বছর বয়সী কৃষক নিজাম প্রামাণিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে তাঁরই মাদকাসক্ত ছেলে মোস্তফা প্রামাণিক। দীর্ঘদিন ধরে মোস্তফা মাদকের নেশায় আসক্ত ছিল। নেশার টাকা না পেলে সে ঘরে ভাঙচুর করতো, পরিবারকে মারধর করতো। সেই নেশাই শেষ পর্যন্ত কেড়ে নিলো তার বাবার জীবন।
নিহত নিজাম প্রামাণিক প্রতিদিনের মতো নামাজে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঠিক তখনই তার নিজের সন্তান হাঁসুয়া হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে ফেলে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মোস্তফা তাদের ওপরও হামলা চালায়। তাকে আটক করতে গিয়ে তিনজন সহকারী পুলিশ কর্মকর্তা ছুরিকাঘাতে আহত হন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ অভিযুক্তকে নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহতের অপর ছেলে জানিয়েছেন, “সে মাদকের জন্য টাকা না পেলে ভাঙচুর করতো, মারতো। আজ বাবাকে নামাজরত অবস্থায় হত্যা করেছে। এখনই যদি তাকে ক্রসফায়ারে মারা হয়, আমাদের কিছু বলার থাকবে না।” তার এই বক্তব্যে সমাজের গভীর হতাশা ও আইনের প্রতি আস্থাহীনতা ফুটে উঠেছে। মানুষ এখন আর বিচার নয়, প্রতিশোধেই স্বস্তি খুঁজছে।এ ঘটনা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি পুরো সমাজের বিবেককে নাড়া দেওয়ার মতো এক ভয়াবহ বার্তা। মাদক এখন শুধু অপরাধ নয়, এটি পরিবার ও সমাজের রক্তের বন্ধন ছিন্ন করছে। যে সন্তান একসময় বাবা-মায়ের জান্নাতের চাবি ছিল, সেই সন্তান আজ হয়ে উঠছে মৃত্যুর হাতিয়ার। ঘর এখন আর নিরাপদ নয়, পরিণত হচ্ছে মৃত্যুর মঞ্চে।
মাদক যখন ঘরে প্রবেশ করে, তখন আইন, ধর্ম ও পারিবারিক মূল্যবোধ সবকিছুর মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে। মাদকাসক্তি এখন কেবল একটি ব্যক্তিগত রোগ নয়—এটি রাষ্ট্রের জন্যও এক ভয়ংকর সামাজিক ও নিরাপত্তা সংকট। পুলিশ সদস্যরা আহত হওয়ায় এটি আরও স্পষ্ট হয়েছে যে মাদকাসক্ত ব্যক্তি এখন সমাজের জন্যও অস্ত্রধারী বিপদে পরিণত হচ্ছে।
আজ প্রশ্ন একটাই—যে দেশে বাবা নামাজে দাঁড়িয়েও নিরাপদ নয়, যে পরিবারে মাদক সন্তানের চেয়ে শক্তিশালী, যে রাষ্ট্রে মাদকাসক্তিকে রোগ না ভেবে বাজার বানানো হয়, সেই রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কোথায়?মাদকের কারণে আর কত পরিবার ধ্বংস হবে—এ প্রশ্নের উত্তর এখন সময় ও সমাজের হাতে।