

হোমনা প্রতিনিধি:বাঞ্ছারামপুরে মাছের ঘের কে কেন্দ্র করে রাহাত আলী শাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জসিম উদ্দিন ও তার দুই ছেলে এনামুল হক ইমন ও আলভী কে বেধড়ক পিটিয়ে ও এলোপাতাড়ি মাথায় কুপিয়ে গুরুতর জখম করে আহত করেছে জাকির মিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন একদল বাহিনী। ঘটনানটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দরিয়াদৌলত ইউনিয়নের কালাইনগর গ্রামে।
এ ঘটনায় জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে ১১ জন কে আসামী করে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলো- দরিয়াদৌলত ইউনিয়নের কালাইনগর গ্রামের জাকির মিয়া (৫০), জহিরুল ইসলাম (২৫), শ্রাবণ (২০), রুবেল (৩০), আনার হোসেন (৪৫), জীবন মিয়া (১৯), রিপন মিয়া (৫০), তোফায়েল হোসেন (২৪), হৃদয় মিয়া (২০), রফিকুল ইসলাম (৪০), কাইয়ুম মিয়া (২৫)।
এদিকে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় মামলা করা হলেও আসামীরা ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য বাদী জসিম উদ্দিন ও তার পরিবার কে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
জানা যায়, মাছের ঘের কে কেন্দ্র করে একই গ্রামের জাকির মিয়া ও তার নেতৃত্বাধীন ১৫-২০ জনের একদল বাহিনী নিয়ে ১ অক্টোবর রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে জসিম উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে জসিম উদ্দিন ও তার দুই ছেলেকে বেধড়ক মারধর ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম ও গুরতর আহত করে এবং তার বাড়িতে থাকা স্বর্ণলঙ্কার, নগদ অর্থ ও মালামাল নিয়ে যায়। এসময় প্রতিবেশীরা তাদের কে উদ্ধার করে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জসিম উদ্দিন জানান, আমি দীর্ঘ ২০ বছর যাবত আমার জমি সংলগ্ন তিতাস নদীর কিছু অংশে ঘের তৈরি করে মাছ ধরে আসছি। গত কয়েকমাস যাবত তারা আমার থেকে চাঁদাদাবী করে আসছে। আমি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা বিভিন্ন সময় আমাকে নানা রকম হুমকী প্রদান করেন। ১ অক্টোবর সন্ধায় আমি ঘেরে গেলে তারা এসে আমাকে নানা রকম গালমন্দ ও হুমকি প্রদান করতে থাকে। তখন আমি চলে আসি। এরপর সেদিন রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে আমার বাড়িতে জাকিরের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একদল সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে ঘর থেকে ডেকে বের করে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে ও আমাকে রাম দা দিয়ে মাথায় কোপ দেয়, আমার চিৎকারে আমার বড় ছেলে ও ছোট ছেলে ঘর থেকে বের হলে আমার বড় ছেলেকে বেধড়ক মারধর করা হয় ও আমার ছোট ছেলের মাথায় রাম দা দিয়ে কুপানো হয়। আমাদের চিৎকারে স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমার ছোট ছেলেকে ঢাকা মেডিকেলে আশংকাজনক অবস্থায় রেফার্ড করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পর অপারেশন বিলম্ব হওয়ায় সেখান থেকে প্রাইম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। একদিন পর তার জ্ঞান ফিরে ও আশংকাজনক অবস্থায় তাকে ৩দিন আইসিইউতে রাখা হয়। এছাড়াও জাকির ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমার বাড়িঘরের বিভিন্ন মালামাল স্বর্ণ, টাকা পয়সা সহ প্রায় ৬-৭ লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
আমি এ ঘটনায় বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় একটি মামলা করি। মামলা ৯ (অক্টোবর) এফআইআর হলেও পুলিশ আসামীদের কে গ্রেফতার করতেছে না। পুলিশ আসামী কে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না জিজ্ঞেস করলে তারা আটক করবে করবে বলে রহস্যজনক কারনে কাউকেই আটক করছে না। আসামীরা প্রকাশ্যেই ঘুরেফিরে আমাকে মামলা উঠিয়ে নিতে নানা রকম ভাবে হুমকি দিচ্ছে। যদি মামলা না তুলি তাহলে আমাকে ও আমার পরিবার কে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী দিচ্ছে। এই মুহুর্তে আমি ও আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি।
জসিম উদ্দিনের ছোট ছেলে আলভী বলেন, ১ অক্টোবর রাত ১২ টার দিকে আমাদের বাড়িতে এসে জাকির ও তার সন্ত্রাস বাহিনী আমার বাবা ও বড় ভাইকে বেধড়ক মারতে ও কুপাতে থাকে, আমি তাদের কে বাঁচাতে গেলে তারা আমাকেও বেধড়ক মারে ও আমার মাথায় রাম দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। এরপর স্থানীয়ারা আমাদের চিৎকার শুনে আমাদের কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমাকে ঢাকাতে প্রেরণ করা হয়। আমি ৩দিন আইসিইউতে ছিলাম। এখন জাকির বাহিনী আমাদের কে মামলা উঠিয়ে নিতে হুমকী দিচ্ছে। মামলা না উঠিয়ে নিলে আমাদের পরিবারের সকল কে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে জানায়।
এ বিষয়ে জাকির হোসেন বলেন, আমি ঘটনার সাথে জড়িত নই। মাছ ধরা নিয়ে শ্রাবণ ও রুবেলের সাথে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়েছিল। আমি সমাধান করতে গিয়েছিলাম। পরে শুনি আমার নামেও মামলা দিয়েছে।এ বিষয়ে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা বাঞ্ছারামপুর থানার উপ-পরিদর্শক মো. হাসান মুঠোফোনে বলেন, আসামীদের গ্রেফতারের জন্য আমরা অনেকবার চেষ্টা করেছি, মামলা হওয়ার পর আসামিরা পলাতক। আমি ছুটিতে আছি এসে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত থাকবে।