

সাইদ সাজু, তানোর থেকে: রাজশাহীর তানোরে তৈরি হয়নি বিকল্প নেতৃত্ব বিএনপিতে স্থবিরতা কাটাতে তানোর পৌর সভার সাবেক মেয়র তানোর উপজেলা বিএনপি সাবেক সাধারন সম্পাদক এবং রাজশাহী জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর মিজানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন উপজেলা বিএনপি ও অংগ সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৯০ ভাগ নেতা কর্মি ও সমর্থকনমরা। মিজানের শুন্যতা পুরন করতে কোন নেতা নেতৃত্ব দিয়ে সভা সমাবেশ ও দলীয় কোন কর্মকান্ড করতে পারেনী। ফলে,মিজানকে নিয়েই বিএনপির রাজনীতি করতে চাচ্ছে উপজেলা বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা কর্মী ও সমর্থকরা।
গত রমজান মাসে ইফতার মাহফিলে নিজ দলের দুই কর্মীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংগঠনিক পদসহ দল থেকে মিজানুর রহমান মিজানকে বহিষ্কার ও তানোর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে রাজশাহী জেলা বিএনপি। সেই থেকে তানোর উপজেলা বিএনপির কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় পর থেকেই এ স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। দুই ঈদ পার হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো সভা-সমাবেশ কিংবা সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখা যায়নি। যদিও মাঝখানে মুন্ডুমালা পৌর বিএনপির প্রয়াত নেতা আজহার মাস্টারের মৃত্যুতে শোকসভা এবং তানোর উপজেলা মিলনায়তনে এক দিনের পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল তাও মিজানের নেতৃত্বেই।
সেখানে তানোর উপজেলার সকল ওয়ার্ডের বিএনপির ও অংশ সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সবারই একই দাবি মিজানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরে গেলেও মিজানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। ফলে, দীর্ঘ দিন ধরে দলীয় কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকালেও তানোরর কারণে তানোর বিএনপি ভেতরে ভেতরে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এই বিভক্তি ও স্থবিরতার মূল কারণ হিসেবে নেতাকর্মীরা সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজানের বহিষ্কারাদেশকেই দায়ী করছেন।
তৃণমূল নেতাদের মতে, “তানোর বিএনপি মানেই মিজান।” তাঁর উপস্থিতি নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরিয়ে আনে। তাই তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি দাবি উঠেছে, মিজানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দলকে দ্রুত সুসংগঠিত করতে হবে। তাঁদের মতে, মিজান ছাড়া তানোরে বিএনপি কার্যকর কোনো অবস্থানে যেতে পারবে না।দলীয় সূত্র জানায়, গত রমজানে পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিলে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিজান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনকে বরণকে কেন্দ্র করে ইউপি বিএনপির সাবেক চেয়ারম্যান মমিনুল হক মমিন ও বর্তমান সভাপতি প্রভাষক মজিবুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে মমিনের ভাই বিএনপি কর্মী গানিউল আহত হয়ে পরে মারা যান।
এই ঘটনায় মিজান, মজিবুরসহ তাদের অনুসারীদের নামে মামলা হয়। যদিও মিজান মঞ্চে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, তবুও তাঁকে মামলায় আসামি করা হয়। এরপর কেন্দ্রীয় নির্দেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে মিজান ও মজিবুরকে বহিষ্কার করা হয়। বিষয়টি তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে। পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন তোফা সকালের খবরকে বলেন, মিজান স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সাহসী নেতা। বিগত সময়ে মেয়র থাকা অবস্থায় তাঁকে ৭০ কেজি চাল চুরির মিথ্যা মামলায় জেলে যেতে হয়। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করেছেন। কোটা আন্দোলনের সময়েও তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল।
অথচ এমন একজন নির্যাতিত নেতাকে বহিষ্কার করা দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অযৌক্তিক।পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুব মোল্লা বলেন, তানোরের সাতটি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভার নেতাকর্মীরা একাধিক সভা করে মিজানের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। কারণ মিজান ছাড়া তানোর বিএনপি কার্যত অচল। বিভক্ত বিএনপিকে এক কাতারে আনতে মিজান ছাড়া অন্য কাউকে যোগ্য মনে করছেন না তৃণমূল ও সিনিয়র নেতারা।পাঁচন্দর ইউপির সাবেক সম্পাদক ও সহকারী অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন বলেন, মিজান তানোর বিএনপির ‘আইকন’। তিনি ছাড়া দলে ঐক্য ফিরবে না।
আগাম নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে দলকে সুসংগঠিত করতে হলে কেন্দ্রীয় ও জেলা কমিটিকে তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।সাবেক কাউন্সিলর আবু সাঈদ বাবু ও আব্দুল মান্নান সকালের খবরকে বলেন, মিজানের নেতৃত্বে অতীতে বহু আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে। তাই দলে ঐক্য ফেরাতে তাঁর ফিরে আসা জরুরি। চাঁন্দুড়িয়া ইউপির সভাপতি আজাদ ও সম্পাদক সাজ্জাদ সকালের সময়কে বলেন, মিজান তানোর বিএনপির `বটবৃক্ষ`। তাঁর ছায়াতলে সবাই রাজনীতি করতে চান। অথচ তাঁকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার করে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বহিষ্কারের পর থেকে দলে সংকট কাটছে না।