

মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধি: দেশব্যাপী ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় জারি করা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আজ শনিবার (২৫ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাত থেকে শেষ হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় ঝালকাঠির সুগন্ধা, বিষখালী ও হলতা নদীতে নেমে পড়তে প্রস্তুত জেলেরা। ইতোমধ্যে জাল মেরামত, নৌকা-ট্রলার সংস্কারসহ শিকারের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তারা।
সরকার প্রতি বছরের মতো এবারও ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর উদ্দেশ্য ছিল—ডিমওয়ালা মা ইলিশ ও পোনা ইলিশ রক্ষা করা, যাতে ভবিষ্যতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
নিষেধাজ্ঞার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কঠোর নজরদারি চালায়। ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ দিনে ৩৫৫টি টিম মাঠে অভিযান চালিয়েছে। এ সময়ে ১০৮টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৩০টি মামলা দায়ের করা হয়। ২৩ জন জেলেকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানে ৬৫২ কেজি ইলিশ জব্দ করে এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১২ লাখ ২১ হাজার ২০০ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি ৬৪ লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকা। নিলাম থেকে সরকারি আয় হয়েছে ৬২ হাজার ১০০ টাকা। তবে জেলেদের অভিযোগ, অভিযানের সময় অনেকেই সরকারের বরাদ্দকৃত চাল পাননি। ফলে অনেক পরিবার চরম কষ্টে দিন কাটিয়েছে।
রাজাপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গৌতম মন্ডল বলেন, “মা ইলিশ রক্ষায় এবার আমরা ব্যাপকভাবে অভিযান পরিচালনা করেছি।জেলেদের সচেতনতা বেড়েছে, তাই আশাকরি এই নিষেধাজ্ঞার সুফল এবার মাছের উৎপাদনে স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।”
রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি বলেন, “নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে প্রশাসন খুবই কঠোর ছিল। আমরা চাই জেলেরা নিয়ম মেনে মাছ ধরুক, যাতে দেশের জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পায়।”
জেলেদের মধ্যে আনন্দের পাশাপাশি উচ্ছ্বাসও লক্ষ্য করা গেছে। সুগন্ধা ও বিষখালী নদীপাড়ে এখন চলছে জাল সেলাই, নৌকা মেরামত ও তেল ভরার ব্যস্ততা। রাত পোহালেই তারা নামবেন কাঙ্ক্ষিত ইলিশ শিকারে।