

গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :পটুয়াখালীর গলাচিপায় জমিজমার জালিয়াতি মামলা ধামাচাপা দিতে মারধরের নাটক সাজানোর অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন ইটবাড়িয়া গ্রামের শুক্কুর হাওলাদারের স্ত্রী হাফিজা বেগম। তিনি দাবি করেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে তার স্বামীর বড় ভাই আনছার হাওলাদার তাকে একা পেয়ে সকাল ৮ টার দিকে মারধর করেছে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন হাফিজা বেগম। তবে এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো বলে দাবি করেছেন আনছার হাওলাদার।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাফিজা বেগম বর্তমানে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সকাল ১০ টার দিকে তিনি কিল, ঘুষিতে আহত হওয়ার কথা বলে ভর্তি হয়েছে। তবে তার শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গলাচিপা সদর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ইটবাড়িয়া গ্রামের জবেদ হাওলাদারের দুই পুত্র আনছার হাওলাদার ও শুক্কুর হাওলাদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি। ফলে দু’পক্ষের মধ্যে প্রায়ই উত্তেজনা দেখা দিত।
এ বিষয়ে আনছার হাওলাদার বলেন, আমার বোনের ওয়ারিশ সম্পত্তি ভাগিনারা বিক্রি করতে চাইলে আমি ও আমার ভাইয়ের ছেলে ইলিয়াস ও ইমরান ক্রয় করার জন্য চুক্তি করি। ২০২৪ সালের ২৪ মার্চ বায়না বাবদ ১ লাখ টাকা দেই। পরবর্তীতে ১ এপ্রিল আরও ৫৫ হাজার টাকা প্রদান করে দলিল রেজিস্ট্রার করি। কিন্তু পরে জানা যায়, ইলিয়াস ও ইমরান গোপনে আগেই ৩১ মার্চ ২০২৪ তারিখ ওয়ারিশদের কাছ থেকে অন্য একটি দলিল করে ফেলেছে। যা আমার অজানা ছিলো এবং আমার সাথে প্রতারণা করে দলিল রেজিস্ট্রার করেছে তারা। এ ঘটনায় আমি আদালতে জালিয়াতি মামলা করেছি। তারপর থেকে আমার ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করছে তারা। আজকের কথিত মারধরের ঘটনা পুরোপুরি সাজানো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
আনছারের ছেলে আলমাস হাওলাদার বলেন, আমি বাড়িতে ছিলাম না, তারপরও আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এটি নিছক হয়রানি ও সাজানো ঘটনা। মূলত জায়গাজমি বিরোধ ও জালিয়াতি মামলা করায় তারা ক্ষিপ্ত।
অন্যদিকে, ইলিয়াস হাওলাদার বলেন, জমিজমা নিয়ে আমাদের বিরোধ বহুদিনের। আজকে আমার মাকে মারধর করেছে। আমার মা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তবে মারধরের সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন কিনা জানাতে চাইলে বলেন, ঘটনাস্থলে তিনি উপস্থিত ছিলেন না ঘটনাটি শুনেছেন। ইলিয়াসের স্ত্রী ছালমা বেগম জানান, মারধরের চিৎকার শুনে তিনি ছুটে যান।
এদিকে, প্রতিবেশী ও ওই বাড়ির অন্যান্য বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে কোনো মারধরের ঘটনা ঘটেনি। তবে জমিজমা নিয়ে দু’পক্ষের দ্বন্দ্বটি পুরোনো এবং বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আতাউর রহমান বলেন, সকালে হাফেজা বেগম নামে ওই নারী হাসাপাতালে এসে মারধরে আহত হওয়ার কথা জানালে তাকে সাধারণ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তবে মারাত্মক কোন আঘাতের চিহ্ন ছিল না।
এ বিষয়ে গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশাদুর রহমান বলেন, ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।