

রফিকুল ইসলাম রনজু (কুড়িগ্রাম) উপজেলা প্রতিনিধি: ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এর মধ্যে ভোর থেকে ভারতের দিক থেকে কালজানি নদী হয়ে ভেসে আসতে থাকে হাজার হাজার গাছের গুঁড়ি। এসব গুঁড়ি বাকল ও শিকড় বিহীন। তা ছাড়া দেখতে লাল বর্ণের হওয়ায় উৎসুক জনতা রক্ত চন্দন কাঠ ভেবে ধরতে নদীতে নামতে থাকেন। তীরে তুলে এগুলো চন্দন কাঠ হিসেবে বিক্রি করছেন অনেকে। একেকটি ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দাম চাওয়া হচ্ছে। বন বিভাগ বলছে, মানুষ না বুঝেই এসব গুঁড়ি শ্বেত বা রক্ত চন্দন ভেবে বেচাকেনা করছেন।
ভুটান হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার হাসিমারা বনাঞ্চল দিয়ে কালজানি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বৃষ্টির পানিতে ওইসব বনাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সেখান থেকে গুঁড়িগুলো ভেসে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রোববার ভোর থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ভূরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী উপজেলার নদনদী-তীরবর্তী মানুষ নানা উপায়ে এসব গুঁড়ি তীরে তুলছেন। গুঁড়ি তুলতে গিয়ে রোববার সকালে নাগেশ্বরীর বেরুবাড়ীর খেলারভিটায় খামার নকুলা গ্রামের মনছুর আলী (৪০) নামে একজন ডুবে নিখোঁজ হয়েছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত তাঁর খোঁজ মেলেনি।
নাগেশ্বরী ফায়ার সার্ভিসের সদস্য মাসুদুর রহমান বলেন, নদীতে অনেক স্রোত। সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করেছি। পরে না পাওয়ায় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে উদ্ধারকাজ সমাপ্ত করেছি।
মঙ্গলবার দুপুরে দেখা যায়, দুই দিনে ভেসে আসা কাঠের গুঁড়ি কালজানি নদী ও দুধকুমার নদের পারে স্তূপ করে রাখা। একেকটি গুঁড়ির আকার ও পরিমাপভেদে ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেসব কাঠের গুঁড়ি নষ্ট হয়ে গেছে, সেগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য কিনছেন কেউ কেউ।
রোব ও সোমবার দেখা যায়, নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের নুনখাওয়া, বেরুবাড়ী ইউনিয়নের ইসলামপুর থেকে খেলারভিটা হয়ে কালীগঞ্জ ইউনিয়নের সিঅ্যান্ডবি ঘাট পর্যন্ত দুধকুমারের দুই তীরে মানুষের ভিড়। তাদের কেউ নৌকা নিয়ে, কেউ সাঁতরে সেই গুঁড়িগুলো ধরে স্তূপ করে রাখছেন তীরে।
রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দামাল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব বলেন, চারজন মিলে ৫০ ফিটের একটি লাল গাছ উঠিয়েছি। এটা রক্ত চন্দনের গাছ। ১ লাখ ২০ হাজার হলে বিক্রি করব।
বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ছিটমাইলানী গ্রামের বাসিন্দা মো. সিরাজ বলেন, আমি রোববার রাত থেকে পরিবার নিয়ে প্রায় ৫০০ মণ কাঠের গুঁড়ি জমিয়েছি। জ্বালানির জন্য কিছু রেখে বাকিগুলো বিক্রি করব।
কালজানি পারের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, আমার খড়ির গোলা রয়েছে। একেকটা গাছের গুঁড়ি ১২ হাজার টাকায় কিনলাম। এগুলো কেটে জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করব।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিদ মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, সার কাঠে প্রচুর ট্যানিন এবং ফেনলিক যৌগ থাকে। যখন কাঠ পানিতে ভেজে, তখন এই যৌগগুলো পানিতে দ্রবীভূত হয়ে বের হয়। ট্যানিন অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জারণ ঘটায় এবং লালচে-বাদামি রং তৈরি করে। প্রকৃতপক্ষে এগুলো চন্দন কাঠ নয়।জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান বলেন, আমরা রোববার সরেজমিন এসব গাছের গুঁড়ি দেখেছি। দীর্ঘদিন এসব পানিতে থাকায় লাল বর্ণ ধারণ করেছে। প্রকৃতপক্ষে শ্বেত বা রক্ত চন্দনের কোনো বিষয় নেই। লোকজন না বুঝেই এসব বলছেন।